দেশের পর্যটন শহর কক্সবাজারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্যটন জোন কলাতলী। এই জোনে রয়েছে প্রায় পাঁচশ’ হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও কটেজ। বিভিন্ন সময় এসব হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও কটেজে আত্মহত্যা, হত্যাসহ নানা অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। কিন্তু এই হার ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে। গত এক সপ্তাহে হোটেল কক্ষে তিনটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
সর্বশেষ শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে সুগন্ধা এলাকার সী কক্স হোটেলের ম্যানেজারের মরদেহ উদ্বার করা হয়েছে। তিনটি মৃত্যুই প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও কটেজগুলোতে যেসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে তার মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনাই বেশি। তাই দিনে দিনে পর্যটন নগর কক্সবাজারের হোটেল মোটেল এখন ‘সুসাইড’ জোনে পরিণত হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।
Add
Add
আবার হোটেল কক্ষে এভাবে মৃত্যুর ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। তাই বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে হোটেল-মোটেলের মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের। এই নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছে হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতি।
জানা গেছে, গত ১ আগস্ট কলাতলীর ওয়ার্ল্ড বীচ হোটেলের ৭১৭ নম্বর কক্ষ থেকে সৌরভ সিকদার নামের একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার বাড়ি জেলার কুতুবদিয়ায়। স্ত্রীর ওড়নায় ফ্যানের সাথে ঝুলে ছিলেন তিনি। পাশের কক্ষে ছিলেন তার স্ত্রী। স্ত্রীর পরকিয়ার কারণে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর পরদিন ২ আগস্ট রাত ১০টার দিকে শহরের দি আলম গেস্ট হাউসের ৪০৬ নম্বর কক্ষে চিরকুট লিখে কাউসার নামের এক পর্যটক আত্মহত্যা করেন। তার বাড়ি জয়পুরহাট জেলায়।
এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বশেষ হোটেল লাগোয়া স্টাফ কোয়ার্টার থেকে উদ্ধার করা হয় হোটেল সী কক্সের ম্যানেজার খালেদ আশরাফ বাপ্পীর মরদেহ। তার পরিবার রহস্যজনক মৃত্যু দাবি করলেও নিজের কক্ষে ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে পাওয়া গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। মূলত মফিজ নামের এক ব্যবসায়ির কাছ থেকে পৌনে ১০ লাখ টাকা পেত বাপ্পী। টাকাগুলো আদায় করতে না পেরে বেশ হতাশায় ছিলো সে। এ কারণে আত্মহত্যা করতে পারে বলে ধারণাকরা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কিছু কিছু অপরাধী কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও কটেজগুলোকে নিরাপদ স্থান ভাবেন। তারা বিভিন্ন অপরাধের সাথে হত্যার মতো ঘটনা ঘটানোর জন্য পর্যটকের বেশ ধরে নিরাপদ স্থান থেকে এখানকার হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও কটেজগুলোকে বেছে নেন। বিশেষ করে ক্ষুব্ধ থাকা কাছের মানুষগুলোকে ফুঁসলিয়ে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও কটেজগুলোর কক্ষে নিয়ে গিয়ে কৌশলে হত্যা করে। প্রতি বছরে এমন কয়েকটি ঘটনা ঘটে থাকে। একই সাথে যারা আত্মহত্যা করতে মনস্থির করে তারাও নিরাপদ স্থান হিসেবে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও কটেজগুলোকেই বেছে নেন।
তবে হোটেল-মোটেল মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এসব মৃত্যুর জন্য কোনোভাবেই হোটেল মালিকেরা দায়ী থাকে না।
এ ব্যাপারে হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, পারিবারিক কলহ, ব্যবসায় লোকসান ও সম্পর্কে অবনতিসহ নানা কারণে হতাশাগ্রস্ত অনেকে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিলে কক্সবাজারকে নিরাপদ মনে করে। হোটেল কক্ষে নিজের মতো করে আত্মহত্যা করতে চলে আসে তারা। তবে হোটেলে অস্বাভাবিক কোনো লোকজনকে একা কক্ষ দেয়া হয় না। তারপরও নানাভাবে নিজেকে স্বাভাবিক দেখিয়ে কেউ কেউ কক্ষে উঠে যায়।
হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেস সিকদার বলেন, কক্সবাজারে পাঁচ শতাধিক হোটেল রয়েছে। প্রতিদিন অর্ধলাখ পর্যটক আসে। বেড়ানো ছাড়াও অনেকে নানা মানসিকতা নিয়ে আসে এখানে। এত মানুষকে পর্যবেক্ষণ করা কোনো কর্তৃপক্ষের সম্ভব না। তারপরও আমরা নিজেদের মতো করে চেষ্টা করছি; যেন মৃত্যুসহ কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা না ঘটে।
তিনি আরো বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে যে কটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে সেগুলো নিয়ে আমরা বৈঠক করেছি। বৈঠকে কিভাবে এসব অস্বাভাবিক ঘটনা রোধ করা যায় সে ব্যাপারে কি কি সতকর্তা অবলম্বন করা যায় সে বিষয়ে সব হোটেল মালিকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, হোটেল কক্ষে কেন আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে সেটি নিয়ে আমি তৎপরতা শুরু করেছি। ইতোমধ্যে হোটেল মালিকদের সাথে কথা বলেছি। তাদের নিয়ে বসে বিষয়টি নিয়ে কি করা যায় তা দেখবো।সিভয়েস
পাঠকের মতামত